আমেরিকা কি গৃহযুদ্ধের
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?
Is America heading
towards civil war?
![]() |
আমেরিকা কি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? |
গত 6 জানুয়ারি মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে হাজার হাজার
মানুষের ক্যাপিটাল হিলে সন্ত্রাসী হামলার থেকেও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে শনিবার থেকে
২০ জানুয়ারি বুধবার পর্যন্ত একটানা এ কর্মসূচিতে । এই ঘটনা নিয়ে পেন্টাগন সহ
অঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসি এবং ক্যাপিটাল হিল প্রশাসনেও নানা
বিধ প্রস্তুতি চলছে । জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা ।
ইতিমধ্যেই মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি এর ক্যাপিটল হিলে শপথ গ্রহণের কার্যক্রমকে
নিরাপদ রাখতে ১৫,০০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । হামলা অথবা
অন্য কোনো হুমকি অগ্রাহ্য করেই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস
প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যথারীতি ক্যাপিটাল হিল এর সামনের মঞ্চ থেকেই প্রকাশ্যে
শপথ গ্রহণ এর সংকল্প ব্যক্ত করেছেন । উল্লেখ থাকে যে, এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে
পূর্বের সময়ে ২ লাখ আমেরিকানকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার বৈশ্বিক মহামারী
করোনাভাইরাস এর কারণে মাত্র এক হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । অর্থাৎ
সমস্ত অনুষ্ঠান চলবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে । এমনকি সুসজ্জিত মহড়ার ব্যাপারটিও
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা দেখতে পারবেন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যুদ্ধাংদেহী কর্মসূচি চালালে সবকিছু পাল্টে যেতে পারে
বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৬
থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এমন বিক্ষোভ অথবা সন্ত্রাসী তাণ্ডব এর মোকাবেলার
প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও নগর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ।
এসব কারণেই সমস্ত আমেরিকা জুড়ে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে । যাকে গৃহযুদ্ধের
মতো পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে । ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের ঘোষিত
কর্মসূচিতে সশস্ত্র অভিযান এবং আক্রমণের প্রসঙ্গটিও রয়েছে । উল্লেখ থাকে যে, ১৮৬০-৬১
সালে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় সাউথ ক্যারোলাইনা, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা, আলবামা,
জর্জিয়া, লুইজিয়ানা, টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, আলকানসান, টেনেসি এবং নর্থ
ক্যারোলাইনা অর্থাৎ এই ১১ অঙ্গরাজ্যে দাস প্রথা বিরোধী বিক্ষোভ থেকে গৃহযুদ্ধ
পর্যন্ত পৌঁছে । সেটি ছিল পুরনো বর্বরতার প্রতিবাদ । কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট
ভিন্ন ।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরিয়ে দেওয়া হয় কিংবা তিনি যদি
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে না যান তাহলে ২০ জানুয়ারি
সব অঙ্গরাজ্য, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আদালত ভবন গুলোতে ঝড়ের বেগে ঢুকে সেগুলো দখল
করে নিতে একটি গ্রুপ ডাক দিয়েছে বলে জানিয়ে এফবিআইয়ের এক অন্তরীণ খবরে সতর্ক
করা হয়েছে । ২০২০ সালে ৩ নভেম্বর এর নির্বাচনে পরাজয়কে মেনে নিতে পারছেন না
পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । ৩ নভেম্বর এর নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ
মেতে উঠেছে সয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টরপন্থী সমর্থকরা ।
৬ জানুয়ারি সন্ত্রাসী
হামলায় উস্কে দেওয়া এবং ক্যাপিটল হিলে ইতিহাসে জঘন্যতম একটি অধ্যায়ের সংযোজন
ঘটানোর জন্য কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষে গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্ট করার
বিল উত্থাপিত হয়েছে । যার উপর ভোট হবে ১৩ জানুয়ারি । এই বিল পাসের পরই তা পাঠানো
হবে আমেরিকার সিনেটে । ১৯ জানুয়ারি অর্থাৎ জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগের দিন থেকে
শপথগ্রহণ পর্যন্ত কিংবা তারপরেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের এই বিল পাস এর
কার্যক্রম অব্যাহত থাকতে পারে । সে সময় অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প আমলের ইতি ঘটবে । ২০২৪
সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যাতে প্রার্থী হতে না পারেন এবং অবসরকালীন
নিরাপত্তা-সহায়তা সহ কোনরকম ভাতা না পান সে ব্যবস্থাও হতে পারে এই বিল আইনে পরিণত
হলে । কারণ উভয় দলের অর্থাৎ রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট পার্টির অধিকাংশ সদস্যই মনে
করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন “সন্ত্রাসী” এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জন্য
মারাত্মক হুমকিস্বরূপ ।
একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে,
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার নিজেই এক ঘোষণায় ২০ জানুয়ারি
ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন । শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিশ্চিদ্র
নিরাপত্তা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এবং ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট
এজেন্সিকে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন । অথচ ৬ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প
ক্যাপিটাল হিলে আক্রমণের সময় এমন একটি পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী ছিলেন না অথবা ইচ্ছা
করেই গণতন্ত্রের সূতিকাগারকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, যার মাশুল এখন তাকে
কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হচ্ছে । ক্যাপিটাল হিলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মদদে এবং তার
উস্কানিতে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি সব গণমাধ্যম এর শিরোনাম হয়েছে ।
আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার
সন্ত্রাসী বাহিনী ।
রিপাবলিকান পার্টির
অধিকাংশই এখন ডেমোক্রেটদের পাশে । ভোটারদের মন রক্ষায় অথবা জনসমর্থন ধরে রাখতেই
তাদেরকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সম্পৃক্ততা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে । অনেকে ডোনাল্ড
ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি ত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন । বৈশ্বিক মহামারী
করোনাভাইরাস এর কারণে বিপর্যস্ত আমেরিকায় “ট্রাম্প তান্ডব” এ এক ধরনের হতাশা
সৃষ্টি হয়েছে সে দেশের জনজীবনে । প্রশাসনের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থকরাও হাত
গুটিয়ে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে । কারণ ইতিমধ্যে তারা চিহ্নিত হয়েছেন এবং জো
বাইডেন প্রশাসন এলেই তারা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন । এমন অবস্থা নতুন নয় ।
দলীয় বিবেচনায় অনেক মানুষের চাকরি ফেডারেল প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে । নতুন
সরকার এলে তাদের প্রায় সবাইকে বিদায় নিতে হয় । জো বাইডেনের ডেমোক্রেটরাও সে
প্রস্তুতিতে রয়েছেন । এমন পরিস্থিতির কারণে করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম
স্থবিরতায় আক্রান্ত কিনা সেটাও বিবেচনায় রাখছে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা । বিশেষ করে
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কোন ভাবেই থাকতে পারবেন না এটা
প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ।।
আরও পড়ুন : ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের তৎপরতা । Efforts to remove Donald Trump
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment box.