হিজরি নববর্ষ ও আশুরা
Hijri New Year and Ashura
মুসলিম উম্মাহর কৃষ্টি সংস্কৃতি ও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম । ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসব সহ সবক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের উপর নির্ভরশীল । আর হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমে অনুষ্ঠিত আশুরার রয়েছে আলাদা মর্যাদা ও তাৎপর্য । তাই আজ আপনাদের জন্য হিজরি নববর্ষ ও আশুরা সম্পর্কে এ লেখা ।
![]() |
হিজরি নববর্ষ ও আশুরা |
## হিজরী সন গণনা সূত্রপাত :
প্রাচীন আরবে সুনির্দিষ্ট
কোনো গণনা প্রথা প্রচলিত ছিল না । বিশেষ ঘটনার নামে সাধারণত বছরগুলোর নামকরণ (যেমন
: বিদায়ের বছর, অনুমতির বছর, হস্তীর বছর ইত্যাদি) করা হতো । এছাড়াও অর্থব্যবস্থা
পরিচালনা সুসংহতকরণে নথিপত্র প্রস্তুত ও কর ধার্য করার পর আদায়ের তারিখ নির্দিষ্ট
করা নিয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন । উপরন্তু দলিলপত্রে তারিখ
উল্লেখ না থাকায় নানা ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হয় । এসব সমস্যা দূরীকরণেই হিজরী সন
গণনার সূত্রপাত হয় ।
## হিজরি সনের গুরুত্ব :
জীবনকে সহজ ও সুষ্ঠুভাবে
পরিচালিত করার জন্য এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুই সুনির্ধারিত করে
দিয়েছেন । এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেই আরবি ১২ মাসের নাম সমুহ নির্ধারণ করে দেন
। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র
কোরআনের সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে এরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (শরীয়তের
বিধান ও গণনায়) মাস বারোটি । তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত । ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত
বিধান” । উক্ত আয়াতে উল্লেখিত সম্মানিত চারটি মাস হল :- মহররম, রজব, জিলকদ
জিলহজ । সুরা বাকারার ১৮৯ নং আয়াতে আল্লাহ
পাক আরো বলেন, “তারা আপনাকে চাঁদ
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন - এ হলো মানুষ এবং হজের জন্য সময় নির্ধারক”
। এ আয়াত থেকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের হিসাব - নিকাশের সুবিধার্থে
পঞ্জিকা স্বরূপ চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন । এজন্য চন্দ্র মাস তথা হিজরি সনের গুরুত্ব
অপরিসীম । রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ ও জাকাত চন্দ্রবর্ষ বা হিজরী সন ধরেই আমল করতে
হয় ।
## আশুরা :
আশুরা আরবি শব্দ আশারা
থেকে এসেছে, যার অর্থ দশম বা দশমী । মহররম মাসের ১০ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলা হয়
। সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
পৃথিবীতে আগমন পর্যন্ত বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এ আশুরার দিনে । হযরত মূসা
আলাইহিস সালাম- এর নীল দরিয়া পাড়ি এবং ফেরাউনের সদলবলে ডুবে মরা আশুরার দিনের
অন্যতম প্রধান ঘটনা ।
## আশুরা ও কারবালা :
৬৮০ খ্রিস্টাব্দে, হিজরী ৬১
সনের ১০ মহররম ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয় মানব ইতিহাসের
নির্মমতম হৃদয়বিদারক ঘটনা । এদিন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের - প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, ফাতেমা দুলাল ও চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ)
- এর পুত্র ইমাম হোসাইন (রা) সপরিবারে দামেস্কের অধিপতি ইয়াজিদের দুর্ধর্ষ
বাহিনীর হাতে শাহাদত বরণ করেন ।
## আশুরায় করণীয় :
প্রতিটি ইবাদত আল্লাহর
কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম দুটি শর্ত রয়েছে – ১.আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে
ইবাদত করা এবং ২. রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত পথ ও পন্থা
অনুসারে তা হওয়া । আশুরার রোজা রাখা ছাড়া অন্য কোন রীতিনীতি, সংস্কৃতিও ইবাদত
ইসলাম অনুমোদন করে না । তাই মহররম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে দুটি রোজা
রাখার মাধ্যমেই আশুরার দিনটিকে পালন করা উত্তম । এ রোজা রাখা সুন্নত । আশুরার আমলর
সাথে কারবালার ঘটনার কোন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক নেই ।
## আরবি ১২ মাসের নাম :
** মহরম ** সফর ** রবিউল
আউয়াল ** রবিউস সানি ** জমাদিউল আউয়াল ** জমাদিউস সানি ** রজব ** সাবান ** রমজান ** শাওয়াল
** জিলকদ ** জিলহজ ।
## আরবি ভাষায় সাতদিন:
** ইয়াওমুস সাবাত – শনিবার
** ইয়াওমুল আহাদ - রবিবার
** ইয়াওমুল ইসনাইন - সোমবার
** ইয়াওমুছ ছালাছা -
মঙ্গলবার
** ইয়াওমুল আরবিআ -
বুধবার
** ইয়াওমুল খামিস - বৃহস্পতিবার
** ইয়াওমুল জুম্মাআ - শুক্রবার
## হিজরী সনের উল্লেখযোগ্য কিছু তারিখ:
** ১ মহররম : আরবি নববর্ষ
** ১০ মহররম : আশুরা
** ১২ রবিউল আউয়াল : মিলাদুন্নবী
** ২৭ রজব : শব ই মেরাজ
** ১৫ শাবান : শব-ই-বরাত
** ২৭ রমজান : শব ই কদর
** ১ শাওয়াল : ঈদ-উল-ফিতর
** ৮ - ১৩ জিলহজ : পবিত্র হজ
** ১০ জিলহজ : ঈদ উল আযহা ।।
আরও পড়ুন : পবিত্র কোরআন শরিফের প্রাচীন পান্ডুলিপি - Online Bangla News
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment box.