SUCCESS সফলতা
SUCCESS ( সফলতা )
![]() |
SUCCESS |
সাফল্য বা সফলতা মূলত কোন আকস্মিক ব্যাপার নয় । সাফল্য
ক্রমান্বয়ে অর্জিত মানুষের মৌলিক কিছু গুনাবলীর সমষ্টি । সাফল্যের সংজ্ঞা এক একজনের
কাছে এক এক রকম । একজন কৃষকের ছেলের কাছে সাফল্য হতে পারে পড়াশুনা শেষ করে জীবন পরিচালনা
করার জন্য নূনতম একটি চাকুরী পাওয়া । কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী একটি পরিবারের
সন্তানের কাছে সাফল্য হলো পড়াশুনা শেষ করে
ব্যাবসা করে গাড়ী, বাড়ী ,অঢেল টাকা আয় করা । সুতারাং একজনের কাছে যা সাফল্য
অন্য জনের কাছে তা ব্যর্থতা । সাফল্যের সার্বজনীন রুপরেখা নির্ণয় করা খুবই কষ্টকর ।
তবুও সাফল্যের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যেতে পারে .....
“ আপনি
জীবনে যা চান তা পাওয়াই সাফল্য, যদি এ পাওয়ার মাঝেই আপনার সুখ নিহিত থাকে । ”
জীবনে যে সকল ব্যাক্তিবর্গ সফলতা পেয়েছেন তাদের ইতিহাস
পাঠ করলে দেখা যায় যে অনেক শ্রম, সাধনা, আর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তারা সাফল্যের শিখরে
আরোহন করতে পেরেছে । যে সকল বিষয়বস্তু মানুষকে সফল হতে সাহায্য করে তা নিম্নরুপ :
১ । লক্ষমাত্রাঃ
আপনি যে কাজই করুন না কেন তার প্রত্যেকটি কাজের লক্ষমাত্রা
নির্ধারন না করলে আপনি কাংক্ষীত অবস্থানে পৌছুতে পারবেন না । তাই কাজে সফলতা পাবার
জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রথমে কাজের লক্ষমাত্রা
নির্ধারন করে নিতে হবে । আর আপনাকে সেই লক্ষমাত্রায় পৌছানোর ইচ্ছাটাও প্রবল রাখতে হবে
তবেই আপনি সফলতার দুয়ারে পৌছুতে পারবেন ।
২ । আকাঙ্খাঃ
কোন কিছু লাভের জন্য আপনার ঐকান্তিক আকাঙ্খা থাকতে হবে
। আপনি যা পেতে চান তা যদি যুক্তিসঙ্গত হয় এবং পাওয়ার জন্য যথার্থ চেষ্টা করেন তাহলে
তা পাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব । তবে চাওয়ার আগ্রহ থাকতে হবে প্রবল ।
৩ । কঠোর পরিশ্রমঃ
দৈবক্রমে সাফল্য পাওয়া যায় না । সাফল্য লাভের জন্য দরকার
নিরলস প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রম । আমরা অনেকেই আছি জীবনে সফলতা চাই কিন্তু পরিশ্রম
করতে রাজী নই । তাই আমরা সফলতার মুখও দেখতে পাই না । কঠোর এবং অতিরিক্ত শ্রম দেওয়ার
মানসিকতা থাকলে সাফল্যের ছোঁয়া আপনি স্পর্শ করতে পারবেন । অনেক মহৎ প্রতিভা ও কঠোর
পরিশ্রর না করার কারনে তা নষ্ট হয়ে যায় । তাই আপনাকে সফলতা পেতে হলে অবশ্যেই কঠোর পরিশ্রম
এবং পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে ।
৪ । অঙ্গীকারঃ
সাফল্য ও সমৃদ্ধির জন্য যে কোন কাজের জন্য দরকার অঙ্গীকার
। কোন জায়গায় পৌছতে হলে লক্ষহীন ভাবে চললে হবে না কিংবা নোঙ্গরে বাধা থাকলে চলবে না
। এর জন্য চাই পরিকল্পনা মাফিক জীনব । খেলোয়াড়েরা যখন মাঠে খেলতে নামে তখন তারা অঙ্গিকার
করে জেতার জন্য । তবুও একদল হেরে যায় । এই হেরে যাবার কারন তাদের ক্ষমতা কিংবা দক্ষতার
অভাব নয় বরং তাদের অঙ্গীকার বা আবেগের ব্যাপারটি । অঙ্গীকার বা আবেগের ব্যাপারটি খেলোয়াড়দের
মনে যতই প্রবল থাকে ততই তারা সফলতার দ্বারপ্রান্তে থাকে । তাই প্রত্যেকটি কাজে থাকতে
হবে সঠিক পরিকল্পনা এবং অঙ্গীকারবদ্ধতা ।
৫ । দায়িত্ববোধঃ
জীবনে সফলতা পাবার জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে । আপনি দায়িত্ব
না নিয়ে প্রচুর বিত্ত বৈভরে মালিক হবেন, নাম-যশ পাবেন এবং সুন্দর জীবন যাপন করবেন তা
সম্ভব নয় । সফলতা পাবার জন্য আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে । তবে ঝুকি বা দ্বায়িত্ব নেবার
অর্থ এই নয় যে সকল কাজ আপনি একা করবেন কিংবা অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিবেন । আপনি দায়িত্ব
নিবেন সুবিবেচনা করে এবং আপনার কাজের যাবতীয় সফলতার দিক খুটিনাটি পরিক্ষা করে ।

৬ । চরিত্রঃ
জীবনে যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাদের প্রতিষ্ঠার পেছনে
মূলত তাদের উত্তম চরিত্র কাজ করেছে । যারা চরিত্রবান তারা সবাই পৃথিবীতে স্মরনীয় হয়ে
আছেন । উত্তম চরিত্র মুল্যবান রত্নের চেয়েও দামী । এক চরিত্রের গুনাবলি জন্য আপনার
জীবনে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব । আপনার চরিত্র যদি সুন্দর ও মধুময় হয় তাহলে পৃথিবীর
সকল লোক আপনাকে সম্মান জানাতে বাধ্য থাকবে । তাই সফলতা এবং চরিত্র একে অপরের পরিপূরক
।
৭ । আত্ববিশ্বাসঃ
কাজে সাফল্য লাভের জন্য আপনাকে অবশ্যই দৃঢ় বিশ্বাসের
অধিকারি হতে হবে । আপনার মনের মাঝে যদি বিশ্বাস থাকে যে আপনি আপনার কজে সফলতা পাবেন
তাহলে সেটাই হবে আপনার জীবন পাল্টে যাবার মূল চাবিকাঠি । আত্মবিশ্বাস ব্যতীত কোন কাজেই
সফলতা অর্জন করা সম্ভন নয় । তাই হতাশাকে আত্মবিশ্বসে রুপান্তরিত করুন । ইনশাআল্লাহ
আপনি অবশ্যই সফল হবেন ।
৮ । অধ্যবসায়ঃ
আপনি জীবনে কি হবেন তা শুধু আপনার বুদ্ধির উপর নির্ভর
করে না । নির্ভর করে আপনি কাজটির ব্যাপারে কতটুকু অধ্যবসায়ী তার উপর । প্রতিভা বা শিক্ষা
থাকলেই সফল হওয়া যায় না । পৃথিবীতে শিক্ষিত অসফল লোকের অভাব নেই । প্রত্যেক সফল ব্যক্তি
তার লক্ষ্যকে স্থির রেখে সামনে অগ্রসর হয়েছেন । জীবন যুদ্ধ নামক ভূমি থেকে তারা পলায়ন
করেন নি । জীবন নিয়ে যার যার ক্ষেত্রে সংগ্রাম চালিয়ে সম্মূখ পানে অগ্রসর হয়েছেন এবং
ইতিহাস বিজয়ী বীর হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন ।
৯ । শেখার আগ্রহঃ
সাফল্য লাভের অন্যতম প্রধান শর্ত হল নিয়মিত শিক্ষা লাভ
বা জ্ঞান অর্জনে নিজেকে ব্যাপৃত রাখা । অনেক জেনে ফেলেছি আর দরকার নেই এই মনোভাব কখনও
পোষন করা যাবে না । অন্যের কাছ থেকে শেখার প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে । যতদিন বাঁচি ততদিন
শিখব এটাই আপনার আদর্শ হওয়া উচিত । মনে রাখবেন
শেখার সময় কাল হলো “ দোলনা থেকে নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত:”। নিজেকে সব সময় একজন শিক্ষার্থী
হিসেবে ভাবতে হবে । যারা সারা জীবন শিখে চলেছে তারাই সকল ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে ।
১০ । ইতিবাচক মনোভাবঃ
সফলতার জন্য আপনার দরকার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী এবং ইতিবাচক
মনোভাব । সমাজে যে যাই বলুক, হাসাহাসি করুক তাতে কিছু যায় আসে না । আপনি চান আপনার সুখ, সমৃদ্ধি আর সফলতা । এগুলো পাওয়া যায় সঠিক পথ
অনুসরন করে । নিজের লক্ষ্যমাত্রাকে ঠিক রেখে । জীবনে আপনি কি চান , কতদিনে চান এ সবের
একটি ছক তৈরী করে পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হোন । এভাবে যখন আপনার দৃষ্টিভঙ্গী একটি নিদৃষ্ট
লক্ষ্যের দিকে ক্রমাগত একনিষ্ট ভাবে অগ্রসর হবেন তখনই সফলতা এসে ধরা দিবে আপনার কছে
।
পরিশেষে অতি স্বল্প পরিসরে
সফলতার কিছু টিপস্ শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে । সফলতা পেতে হলে বিভিন্ন সফল ব্যক্তিদের
জিবনী পড়া উচিত । বিশেষ করে আলীবাবা ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা এর কথা বলবো । তিনি
জিবনে বারবার ব্যার্থ হয়েও তার নিদৃষ্ট লক্ষ্যের কারনে কিভাবে আজ তিনি সফল এবং পৃথিবীর
অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিদের একজন । আর জিবনে সফল হতে হলে নিদৃষ্ট পরিকল্পনা, প্রবল
ইচ্ছাশক্তি আর সাহসিকতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে ।তবেই আপনি সফল হবেন এবং মানুষের
কাছে অনুসরনীয় হয়ে থাকবেন ।
আল্লাহ হাফেজ ।
No comments
Please do not enter any spam link in the comment box.