Sher-I-Mahisore Tipu Sutan শের-ই-মহীশুর টিপু সুলতান
শের-ই-মহীশুর
টিপু সুলতান
![]() |
টিপু সুলতান |
টিপু সুলতান
বা (ফতেহ আলী সাহেব টিপু) ছিলেন ভারতের
মহীশুর রাজ্যের শাসনকর্তা। টিপু সুলতান ২০ নভেম্বর ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে জন্ম গ্রহন
করেন। তার পিতার নাম মোঃ হায়দার আলী ও মাতার নাম ফকির-উন-নেছা। টিপু সুলতান ছিলেন
একজন সাহসী যোদ্ধা,বীর সেনা নায়ক,মহান দেশ প্রেমিক ও একজন মহান রাজা। ভোগ বিলাসের মোহকে
বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছিলেন সদা দেশ সেবা এবং সংগ্রামের কঠিন পথ। তিনি কখনও অন্যায় এর
সাথে আপস করেননি। ন্যায় এর পথে সদা অবিচল। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ
করেন। তিনি শৌর্যবীর্যের কারনে শের-ই-মহীশুর (মহীশুরের বাঘ) নামে পরিচিত এবং বিক্ষাত ছিলেন। টিপু সুলতান তার জীবনের
শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করেছেন স্বাধীনতার জন্য – মানুষের জন্য। ভারতের স্বাধীনতাকামীতার
জন্য তাকে ভারতের বীরপূত্র বলা হয়। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত কৃপান হাতে পড়েছেন
অন্যায় আর অসুন্দরের বিরুদ্ধে।
তিনি বিশ্বের
সর্ব প্রথম রকেট আর্টিলারি এবং বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যুদ্ধ যুদ্ধ সরন্জাম তৈরী করেন।
তিনি তার শাষন আমলে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক অবকাঠামো উদ্ভাবন করেছিলেন। পাশাপাশি একটি
নতুন ভিুমি রাজস্ব ব্যাবস্থা চালু করেন যা মহীশুরের রেশম শিল্পের সূচনা করেছিল। তার
শাষন আমলে তার রাজ্যে আরও অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। তিনি অত্যান্ত
বিচক্ষন রাজা ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালায় তিনি অত্যান্ত সুনিপুন ছিলেন।
পলাশীর
প্রান্তরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা নিজ পরিবারের সদস্যদের ষড়যন্ত্রের কারনে ইংরেজদের কাছে
নির্মম ভাবে পরাজিত হন। পলাশীতে ইংরেজদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় বিজয়ের পর সারা ভারতবর্ষে
বৃটিশ পতাকা উড়ানোর জন্য ইংরেজরা মেতে ওঠে এক বিনাশী খেলায়। ভারতবর্ষ তখন ছোট ছোট অনেক
গুলো ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিলো। অনেক নবাব –রাজা তাদের নিজেদের স্বার্থের মোহে ইংরেজদের
বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এর প্রতিবাদে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন টিপু সুলতান।
ফুঁসে ওঠেন আরও কিছূ নবাব ও রাজা। ইংরেজরা এই প্রতিবাদি নবাব ও রাজাদের বশে আনতে শুরু
করে ষড়যন্ত্র ও দমনের চুড়ান্ত নীতি। শুরু হয় মরনপন লড়াই।একদিকে স্বাধিনতাকামী টিপু
সুলতানের বাহীনি আর অন্যদিকে সম্রাজ্যবাদি ইংরেজ শক্তি।
টিপু সুলতান
ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়র রাষ্ট্রনায়ক, দক্ষ প্রশাসক ও কুশলী
সেনানায়ক। টিপু সুলতানকে ডাকা হতো শের-ই-মহীশুর
। এই উপাধিটি ইংরেজদেরই দেয়া। তার এই বাঘ বা (শের) হয়ে ওঠার পেছনে অনেকগুলো বিষয়
সম্পর্কিত ছিলো। তার অসাধারন ক্ষীপ্রতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা আর কৌপূর্ন রাজ্য পরিচালনা।
বিশেষ করে যুদ্ধ ময়দানে ছিলো তার অসাধারন অভাবনীয় রনকৌশল আর আক্রমনের ক্ষীপ্রতা ছিলো
উল্লেক্ষ যোগ্য। টিপু সুলতানের রাজ্যের রাষ্ট্রীয় প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘই ছিলো তার
অনুপ্রেরনার প্রতীক। তার রাজ্যের পতাকায় লেখা থাকতো “ বাঘই শক্তি ” । তিনি তার রাজসভায় মাঝে মাঝে বলতেন :
“ ভেড়া বা শেয়লের মতো দু’শ বছর বেচেঁ থাকার চেঁয়ে
বাঘের মতো দু’দিন বেচেঁ থাকা অনেক বেশী সম্মানের ’’
টিপু সুলতান
ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ছিলো তার অপরিসিম দরদ ও ভালোবাসা।
ধর্মের প্রতি ছিলো তার অঘাত বিশ্বাস। সত্য ও সুন্দরের প্রতি ছিলো তার অকুন্ঠ শ্রদ্ধা।
তার লড়াই ছিলো অধর্মের বিরুদ্ধে, অসুন্দরের বিরুদ্ধে, অত্যাচার ও উৎপিড়নের বিরুদ্ধে।
জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে তার ঘোড়ার পিঠে। যুদ্ধে যুদ্ধে কেটেছে প্রায় সারাটা জীবন।
মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিলেও পরাজয় তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। যখন লোভ আর ভয়ে সরে দাড়িয়েছে
একে একে তার সকল সুহৃদ তখনও তিনি নির্ভীক ও অকুতোভয়।
টিপু সুলতানের
সেনাপতি মির সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের সাথে হাত মেলান। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহু
সৈন্য পলায়ন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত টিপু সুলতানই একমাত্র রাজা যিনি নিশ্চিত সামনে
পরাজয় ও মরন জেনেও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন বা আত্মসমার্পন করেননি। সৈন্য ও সেনাপতি
হারিয়ে সম্পূর্ন একাকী লড়াই করে করে পান করেছেন শাহাদাতের পেয়ালা। রাজ্য আর রাজত্বের
চাইতে সামান্য সেপাই হওয়াকে মনে করতেন অধিক সম্মান ও গৌরবের। সত্য ও সুন্দরের জন্য
জীবন দেওয়াকে মনে করতে অধিক গুরুত্বপূর্ন।
মহীশুরের
রাজধানী ছিলো শ্রিরঙ্গপত্তনমে। শ্রিরঙ্গপত্তনম গ্রামে কাবেরী নদীর একটি ব-দ্বীপে একটি
দুর্গ থেকে টিপু সিুলতান তার রাজ্য শাসন করতেন। বর্তমানে শ্রিরঙ্গপত্তনম গ্রাম দক্ষিন
ভারতের কর্নাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার অন্তর্গত। আর এখানেই ইঙ্গ-মহীশুর যুদ্ধে ১৭৯৯
খ্রিষ্টাব্দে টিপু সুলতান নিহত হন। ভব লিলা সাঙ্গ হয় এক মহান যোদ্ধার।
No comments
Please do not enter any spam link in the comment box.