Bengali Language Movement বাংলার ভাষা আন্দোলন
Bengali Language Movement
বাংলার ভাষা আন্দোলন ।
১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ
হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম নেয় । স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় । ফলে পূর্ব বাংলায় ১৯৪৭ সালে “ রাষ্ট্রভাষা
সংগ্রাম পরিষদ ” গঠিত হয় । ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান
গনপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা
হয় । তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবে
সংশোধনী এনে বাংলা ভাষাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান ।
১৯৪৮ সালের
১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ । ১৯৪৮
সালের ২১ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (
বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্দান ) তিনি ঘোষনা দেন “ উর্দু
এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ”
। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ তিনি কার্জন হলে পুনরায় একই কথা বলেন । জিন্নাহ’র এ ঘোষনার প্রেক্ষাপটে
পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থানকারী বাংলাভাষী জনগনের মধ্যে বিপুল ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরুপ
প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে । ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ “ বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম
পরিষদ ” গঠিত হয় । ১৯৫২ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন
ঢাকায় আসেন এবং ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষন দেন । তিনি মুলত জিন্নাহ”র
কথারই পুনরুক্তি করেন এবং তার ভাষনে তিনি বলেন , উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা
। ফলাফল স্বরুপ বাংলা ভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা
বেধে ওঠে ।
![]() |
১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠিত “ সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা
সংগ্রাম পরিষদ ” ২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের
আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় । আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে । ঢাকা শহরে সকল প্রকার
জনসমাবেশ মিছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষনা করে ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ( ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ ) এ আদেশ
অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক নেতা
কর্মি মিলে মিছিল শুরু করে । মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা
অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষন করে । পুলিশের গুলিতে নিহত হন রফিক
, ছালাম , বরতক সহ আরও অনেকে । একুশে ফেব্রুয়ারির এ ঘটানার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন
আরও বেগবান হয় ।
১৯৫৪ সালে পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯
মে ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত গনপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা হিসাবে
স্বীকৃতি দেয়া হয় । এরপর জাতীয় পরিষদের সদস্য ফরিদপুরের আদেলউদ্দিন আহমেদের সংশোধনী
প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় পরিষদে ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা ও উর্দূ উভয় ভাষাই পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ।
১৯৫২
সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংগালি জাতি ২১ ফেব্রুয়ারি কে মাতৃভাষা
দিবস হিসেবে পালন করে আসছে । ভাষার জন্য প্রান দিয়েছে এমন ঘটনা পৃথিবীতে নেই বললেই
চলে । যাদের জন্য আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি এবং যারা বাংলা ভাষার জন্য স্বদেশের
মাটিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে তাদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম ।
No comments
Please do not enter any spam link in the comment box.